ছবির মা

রমিজ দৌড়ে দৌড়ে আসে।
বাবা একজন মহিলা আমাদের কবরস্থানে বসে কাঁদছে!
কাদের অবাক হল।
“তুই কিভাবে জানলি?”
“আম পারতে গিয়েছিলাম, তখন দেখলাম!”
“জ্বীন ভুত না তো?”
“না, মানুষ। খুব সুন্দর দেখতে। চল বাবা, চল দেখে আসি।”
কাদেরকে উঠতে হল। উমা আসতে পারে? উমা ? অত দিন পরে!

ভদ্রমহিলা বের হয়ে যাচ্ছিলেন। কাদের কে দেখে থামলেন।
“উমা!
কেমন আছো?”
“আছি” একেবারেই নিরাসক্ত কন্ঠ!
“কখন এসেছ?”
“একটু আগে?”
“চল, বাসার ভিতরে চল। যা রোদ!”
“নাহ, হাতে সময় নেই, ফিরতে হবে।”
“এতদিন পর এলে..”
“এতদিন পরে মানে? আমার কি আসার কথা?”
“না মানে..”

“বাবা, উনি ছবির মা না?”
উমা এতক্ষন রমিজকে খেয়াল করে নি।
“কে ও? তোমার ছেলে?”
“হু, রমিজ, ইনি তোমার ছবির মা!”
“পাশের কবরটা কার?”
“রমিজের মায়ের। গতবছর করনায়..”
“আমার জন্য খালি রাখার কথা ছিল!”
“আসলে, আসলে তুমিতো কোন যোগাযোগ রাখ নি। আর কখোনো আসতে পার, তাও ভাবি নি!”
একবছরের ছেলেটাকে কবর দেয়ার পর মাত্র ছয়মাস ওদের সম্পর্কটা টিকে ছিল।ছেলের মৃত্যুর জন্য কাদেরকেই দায়ী ভাবত। এখন আর এভাবে ভাবে না, একে ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছে!

এতদিন পর দেশে ফিরে ছেলের কবরটা স্পর্শ করতে এসেছিল। পাশের জায়গাটা খালি থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না তবু মন বিক্ষিপ্ত হয়।
মনের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আরো বেশী দিশেহারা হয়ে পড়ে।
“প্লিজ বাড়িতে চল। দশটা মিনিট বসে যাও।”
একটু সময় ধরে ভাবে।
“চল”।
উমা ওদের পিছু পিছু হাটতে থাকে। রমিজের মাথায়ও কোকড়া চুল শোভনের মত। চেহাড়াতেও মিল আছে। খুব ইচ্ছা হল চুলের মধ্যে একবার হাত বুলায়।
বাড়ান্দার সামনে ওর লাগানো লেবু গাছটা অনেক বড় হয়েছে। পনেরো বছর অনেকটা সময়।

বারান্দাতেই চেয়ার টেনে বসলো।
রমিজ ওনাকে একটু শরবত বানিয়ে দাও। ফ্রিজে লেবু কাটা আছে।
দেয়ালে চোখ গেল। দুটো ছবি টাঙ্গানো।
একটাতে ওর কোলে শোভন,পাশে কাদের। আরেকটাতে একই ভঙ্গিমায় কাদেরের সাথে বাচ্চা কোলে এক ভদ্র মহিলা।
“ওই সোমা।” কাদের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে।
“আমার ছবি রেখেছ কেন?” ওর গলার ঝাজ কাদেরও টের পেল।
“বাচ্চাটার এই একটা ছবিই আমার কাছে আছে। সব তুমি নিয়ে গেছ!”
“আমাকে কেটে বাদ দিতে পারতে!”
“আমাদের তো একটা অতীত ছিল, থাকলো তার একটা সাক্ষী!”
এসময় বাচ্চাটা সরবত বানিয়ে এনেছে। এবার আর মাথায় হাত বুলানোর ইচ্ছাটা আটকাতে পারলো না।
“শুধুই শরবত, একটু বিস্কুট দিতা..”
“না, লাগবে না।”
“তুমি ফ্রান্সেই আছো? “
“না, স্পেনে। আমি তো ফ্রান্সে কখনও ছিলাম না।”
“ও”
“বাবু তুমি কোন ক্লাসে পড়?”
“আমি রমিজ, ক্লাস সিক্স!”
হঠাৎ মনে পড়লো হাত ব্যাগে কয়কটা চকলেট আছে। বের করে ওর হাতে দিল।
বাচ্চাটা একটা লাজুক হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে নিল।
“আমি উঠি। একজনের গাড়ি ধার করে এসেছি।”
“থাকো না, খেয়ে যেও।”
“থাকো না, মা!”
দরজার দিকে পা বাড়িয়েও থমকে দাড়ালো।
কিন্তু তা এক মুহুর্ত্বের জন্য।
“না বাবা, আমার হাতে সময় নেই।”
কাদের ওকে চেনে, ওর না মানে না। তাই আর কথা বাড়ালো না।
“থাকো না, মা, বুয়া আজকে ঝাল করে মুরগী রান্না করেছে!”
মা ডাক শুনলে কেমন দুর্বল লাগে।
“বাবা, ছবির মাকে বল না!”
কাদের রমিজের হাত ধরলো।

উমার কেন যেন মনে হল, আরেকবার ডাকলে ও থাকবে।
শেষবার যেবার চলে গিয়েছিল সেবারও মনে হয়েছিল!

কাদের ডাকে নি।হয়ত ডাকলেও..

Leave a comment

August 18, 2023 · 1:16 pm

Leave a comment